একাদশ শ্রেণি ভর্তি ফলাফল: ৩৭৮ কলেজ শূন্য, ২৫ হাজার বঞ্চিত! কারণ কী?

একাদশ শ্রেণি ভর্তি ফলাফল: ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির প্রথম ধাপের ফলাফল অনুযায়ী, দেশের ৩৭৮টি কলেজ ও মাদ্রাসায় কোনো শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য নির্বাচিত হয়নি। একই সাথে, আবেদন করেও ২৫ হাজার ৩৪৮ জন শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পায়নি, যাদের মধ্যে ৫ হাজার ৭৬৫ জন জিপিএ-৫ প্রাপ্ত। এই অস্বাভাবিক ফলাফলের প্রধান কারণ হলো শিক্ষার্থীর মেধা, পছন্দক্রম এবং আসনের মধ্যে সামঞ্জস্যহীনতা।

দেশের কলেজগুলোতে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির প্রথম ধাপের ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু ফলাফলের পর্যালোচনায় উঠে এসেছে কিছু উদ্বেগজনক তথ্য। রাজশাহী, সিলেটসহ দেশের ৩৭৮টি কলেজ ও মাদ্রাসায় কোনো শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য নির্বাচিত হয়নি। অন্যদিকে, ২৫ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী, যাদের মধ্যে ৫ হাজার ৭৬৫ জন জিপিএ-৫ পেয়েও কোথাও ভর্তির সুযোগ পায়নি। এই অপ্রত্যাশিত ফলাফলের পেছনের কারণ কী এবং শিক্ষার্থীদের এখন কী করণীয়, তা নিয়েই এই প্রতিবেদন।

শূন্য কলেজ ও বঞ্চিত শিক্ষার্থী: কেন এমন হলো?

এই বছরের ভর্তি প্রক্রিয়ায় কিছু চমকপ্রদ অসঙ্গতি দেখা গেছে। রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের অধীন আর এম জে কলেজের মতো ১৫০টি আসন থাকা সত্ত্বেও কোনো শিক্ষার্থী নির্বাচিত হয়নি। একইভাবে সিলেটের জাফলং হানিফা খাতুন মেমোরিয়াল কলেজেও একই চিত্র দেখা গেছে।

শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, এর মূল কারণ হলো শিক্ষার্থীদের পছন্দক্রম। অনেক শিক্ষার্থী জনপ্রিয় ও পরিচিত কলেজগুলোতে অত্যধিক আবেদন করে। কিন্তু তাদের ফলাফল ও পছন্দক্রমের সাথে কলেজগুলোর আসনের সামঞ্জস্য না থাকায় সবাই ভর্তির জন্য নির্বাচিত হয় না। এর ফলে, একদিকে যেমন কিছু কলেজে আসন শূন্য থাকে, অন্যদিকে ভালো ফল করা শিক্ষার্থীরাও ভর্তির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়।

যে ১০ কলেজে কেউ আবেদনই করেনি

সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হলো, দেশের মোট ১০টি কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির জন্য কোনো শিক্ষার্থী আবেদনই করেনি। এর মধ্যে ৯টি কলেজই বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের অধীন। যেমন, কাঠালিয়া মাধ্যমিক গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজে ৪৫০টি আসন থাকলেও কোনো শিক্ষার্থী আবেদন করেনি। এছাড়াও চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের অধীন মোহাম্মদপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজ নামে একটি কলেজেও একই অবস্থা দেখা গেছে।

আবেদন সংখ্যায় শীর্ষ ১০ কলেজ

আবেদন বিবেচনায় দেশের শীর্ষ ১০টি কলেজের তালিকা করা হয়েছে, যা শিক্ষার্থীদের পছন্দের কেন্দ্রবিন্দুকে নির্দেশ করে।

  • ময়মনসিংহের সরকারি আনন্দমোহন কলেজ: ৯৮১টি আসনের বিপরীতে আবেদন করেছে ৩৬ হাজার ১৮৫ জন।
  • ঢাকার আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজ: ২ হাজার ১৬১টি আসনের বিপরীতে আবেদন করেছে ৩৫ হাজার ৮২টি।
  • বি এ এফ শাহীন কলেজ (ঢাকা)
  • শহীদ এ এইচ এম কামরুজ্জামান সরকারি ডিগ্রি কলেজ
  • কবি নজরুল সরকারি কলেজ (ঢাকা)
  • রাজশাহী সরকারি কলেজ
  • বাকলিয়া সরকারি কলেজ
  • বগুড়ার সরকারি এ এইচ কলেজ
  • দিনাজপুর সরকারি কলেজ
  • নিউ গভ. ডিগ্রি কলেজ

এই তালিকা প্রমাণ করে, শিক্ষার্থীদের ঝোঁক নির্দিষ্ট কয়েকটি জনপ্রিয় কলেজের দিকেই।

যে ৩৭৮ কলেজে কোনো শিক্ষার্থী নির্বাচিত হয়নি (বোর্ডভিত্তিক তালিকা)

প্রথম ধাপের ফলাফলে যে ৩৭৮টি কলেজ ও মাদ্রাসা শূন্য রয়েছে, তার বোর্ডভিত্তিক চিত্র নিচে তুলে ধরা হলো:

  • রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড: ৫৬টি
  • দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ড: ৪২টি
  • ঢাকা শিক্ষা বোর্ড: ৩৯টি
  • ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ড: ৩৫টি
  • যশোর শিক্ষা বোর্ড: ১৬টি
  • বরিশাল শিক্ষা বোর্ড: ১৩টি
  • কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড: ১২টি
  • সিলেট শিক্ষা বোর্ড: ৩টি
  • চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড: ১টি
  • মাদ্রাসা: ১৬১টি

দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপের সুযোগ

যারা প্রথম ধাপে আবেদন করেও কোথাও সুযোগ পায়নি বা আবেদনই করেনি, তাদের জন্য দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপে আবেদনের সুযোগ থাকছে। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক খন্দোকার এহসানুল কবিরের মতে, দ্বিতীয় ধাপেও অনেক শিক্ষার্থী আবেদন করবে এবং তখন চিত্রটি কিছুটা পরিবর্তিত হবে। তবে এ সুযোগ সীমিত হওয়ায় পছন্দের কলেজে ভর্তির সম্ভাবনা কমে যায়।

একাদশ শ্রেণির ভর্তি প্রক্রিয়ার এই চিত্রটি বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরে। এটি প্রমাণ করে, ভালো ফল করেও শুধু জনপ্রিয় কলেজের দিকে ঝুঁকলে পছন্দের কলেজে ভর্তি কঠিন হয়ে পড়ে। শিক্ষার্থীদের উচিত, কলেজ নির্বাচনের সময় তাদের ফলাফল, আসনের সংখ্যা এবং পছন্দক্রমের মধ্যে সামঞ্জস্য রেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া। আশা করা যায়, দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপের আবেদনে এই শূন্যতা কিছুটা হলেও পূরণ হবে।

শিক্ষা থেকে আরওবিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের ৬ কর্মকর্তার পদত্যাগ: অন্য ক্যাডারে যোগদানের বিস্তারিত

1 thought on “একাদশ শ্রেণি ভর্তি ফলাফল: ৩৭৮ কলেজ শূন্য, ২৫ হাজার বঞ্চিত! কারণ কী?”

Leave a Comment