একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি: এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাস করা সত্ত্বেও একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হতে আবেদনই করেনি লক্ষাধিক শিক্ষার্থী। আসন্ন শিক্ষাবর্ষে (২০২৫-২৬) কলেজ ও মাদ্রাসায় ভর্তির জন্য প্রথম ধাপে আবেদন করেছে প্রায় ১১ লাখ শিক্ষার্থী। অথচ এবার এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাস করেছে ১৩ লাখের বেশি শিক্ষার্থী। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের প্রায় ১ লাখ শিক্ষার্থীকে বাদ দিলেও, ১ লাখেরও বেশি শিক্ষার্থী কলেজ ভর্তির আবেদন থেকে বিরত থেকেছে। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী কেন প্রচলিত শিক্ষাধারা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে?
শিক্ষার এই সংকটকালীন চিত্রের কারণ অনুসন্ধানে জানা যায়, এর পেছনে একাধিক সম্ভাব্য কারণ রয়েছে। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক খন্দোকার এহসানুল কবিরের মতে, এখনো আরও দুই ধাপে আবেদন করার সুযোগ রয়েছে। তবে, এই বড় ব্যবধান শুধুমাত্র পরবর্তী ধাপের অপেক্ষার ফল বলে মনে করেন না অনেক শিক্ষাবিদ।
ভর্তির আসন সংখ্যার চেয়ে আবেদনকারীর সংখ্যা কম
এবার এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাসের হার ও সর্বোচ্চ সূচক জিপিএ-৫—দুটোই কমেছে। এবার মোট পরীক্ষার্থী ছিল ১৯ লাখ ৪ হাজার ৮৬ জন, যার মধ্যে পাস করেছে ১৩ লাখ ৩ হাজার ৪২৬ জন। অন্যদিকে, সারা দেশে কলেজ ও মাদ্রাসাগুলোতে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তিযোগ্য আসন আছে ২৬ লাখ ৬৬ হাজারের বেশি। এই বিপুল পরিমাণ আসন খালি থাকার তথ্য ইঙ্গিত দেয় যে, সকল পাস করা শিক্ষার্থী আবেদন করলেও, অসংখ্য আসন ফাঁকা থাকবে।
শিক্ষাবিদ ও Career Counseling Services-এর সাথে জড়িত বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এসএসসি পাসের পর প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থার বাইরে নতুন কোনো বিকল্প পেশার দিকে ঝুঁকছে তরুণ প্রজন্ম।
কেন এত শিক্ষার্থী আবেদন থেকে বিরত?
এই বিশাল সংখ্যক শিক্ষার্থীর আবেদন না করার পেছনে বেশ কিছু কারণ থাকতে পারে। নিচে কয়েকটি সম্ভাব্য কারণ আলোচনা করা হলো:
- ভর্তির প্রক্রিয়ার ধীরগতি: অনেকেই প্রথম ধাপের আবেদনের পরিবর্তে দ্বিতীয় বা তৃতীয় ধাপের জন্য অপেক্ষা করেন, বিশেষ করে যদি তারা প্রথম ধাপে কাঙ্ক্ষিত কলেজ না পান।
- শিক্ষার্থীদের বিকল্প পথে ঝোঁক: গত কয়েক বছরে ফ্রিল্যান্সিং, কারিগরি শিক্ষা, ভোকেশনাল ট্রেনিং, এবং বিভিন্ন Online Certification কোর্সের জনপ্রিয়তা বেড়েছে। অনেক শিক্ষার্থী হয়তো প্রথাগত উচ্চমাধ্যমিকের পরিবর্তে এই বিকল্পগুলোর দিকে আগ্রহী হচ্ছে।
- আর্থিক সীমাবদ্ধতা: অনেক পরিবারের জন্য উচ্চশিক্ষার ব্যয়ভার বহন করা কঠিন হয়ে পড়ে। তাই তারা এসএসসি পাসের পর দ্রুত কোনো আয়মূলক পেশার দিকে যেতে বাধ্য হয়।
- ফলাফলের হতাশা: প্রত্যাশা অনুযায়ী ফলাফল না হওয়ায় অনেক শিক্ষার্থী হয়তো হতাশ হয়ে আপাতত ভর্তি প্রক্রিয়া থেকে নিজেদের সরিয়ে নিয়েছে।
ভর্তির জন্য এখনো একাধিক সুযোগ
প্রথম ধাপে যারা আবেদন করতে পারেনি, তাদের জন্য এখনো সুযোগ রয়েছে। দ্বিতীয় ধাপে ২৩ থেকে ২৫ আগস্ট পর্যন্ত আবেদন গ্রহণ করা হবে এবং ফলাফল প্রকাশ হবে ২৮ আগস্ট। তৃতীয় ধাপে আবেদন করা যাবে ৩১ আগস্ট থেকে ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। এই প্রক্রিয়া শেষে ৭ থেকে ১৪ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ভর্তি কার্যক্রম শেষ হবে এবং ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে একাদশ শ্রেণির ক্লাস শুরু হবে।
শিক্ষার্থীরা নির্ধারিত আবেদন ফি দিয়ে সর্বনিম্ন ৫টি ও সর্বোচ্চ ১০টি কলেজ বা মাদ্রাসার জন্য পছন্দক্রম দিয়ে আবেদন করতে পারে। মেধা, কোটা এবং পছন্দক্রমের ভিত্তিতে একটি নির্দিষ্ট কলেজে তাদের অবস্থান নির্ধারণ করা হয়।
এসএসসি পাসের পর লক্ষাধিক শিক্ষার্থীর একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির আবেদন না করা একটি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক এবং শিক্ষাবিষয়ক প্রবণতাকে তুলে ধরে। এটি শুধু একটি ভর্তি প্রক্রিয়ার পরিসংখ্যান নয়, বরং তরুণ প্রজন্মের পরিবর্তিত মানসিকতা এবং বিকল্প পেশার প্রতি তাদের ক্রমবর্ধমান আগ্রহের ইঙ্গিত। এই প্রবণতা দেশের শিক্ষা এবং কর্মসংস্থান ব্যবস্থার জন্য নতুন করে ভাবার সুযোগ তৈরি করেছে।
চাকরির খবর থেকে: The Premier Bank PLC: Law Officer Positions
1 thought on “একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি: লক্ষাধিক শিক্ষার্থীর আবেদন না করার কারণ কী?”