জাপানে উচ্চশিক্ষা ও কর্মসংস্থান: ৩ বছরে ৪৩ হাজার শিক্ষার্থী পাঠানোর পরিকল্পনা

জাপানে উচ্চশিক্ষা ও কর্মসংস্থান: আগামী ৩ বছরে ৪৩ হাজার শিক্ষার্থীকে জাপানে পাঠানোর পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। জাপানে উচ্চশিক্ষা এবং জাপানে দক্ষ কর্মী হিসেবে যাওয়ার এই সুযোগ কীভাবে কাজে লাগাবেন, বিস্তারিত জেনে নিন।

জাপানে উচ্চশিক্ষা ও কর্মসংস্থান

জাপানে এক লাখ দক্ষ কর্মী পাঠানোর উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা নিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। একটি সঠিক পরিকল্পনা ও কর্মসূচির মাধ্যমে আগামী তিন বছরে অন্তত ৪৩ হাজার শিক্ষার্থীকে জাপানে পাঠানো সম্ভব বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এটি দেশের তরুণ প্রজন্মের জন্য একটি নতুন সম্ভাবনার দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে, যেখানে তারা জাপানে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ এবং সম্মানজনক কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবে। গত দুই মাসেই ১০০টির বেশি জাপানি কোম্পানি বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগ দিয়েছে, যা এই উদ্যোগের সফলতার একটি প্রাথমিক ইঙ্গিত।

কেন এই উদ্যোগ? সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ

সোমবার, ১৮ আগস্ট, রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় আরকাইভস ভবনে আয়োজিত ‘বাংলাদেশ থেকে জাপানে উচ্চশিক্ষা ও কর্মসংস্থান: সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক এক সেমিনারে এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। অনলাইনে চাকরি খোঁজার প্রতিষ্ঠান বিডিজবস এবং অ্যাসোসিয়েশন অব জাপানিজ ল্যাঙ্গুয়েজ ইনস্টিটিউটস ইন বাংলাদেশ (এজেএলআইবি) যৌথভাবে এই গুরুত্বপূর্ণ সেমিনারটির আয়োজন করে।

সেমিনারে এজেএলআইবির সভাপতি ওয়াকিল আহমেদ তাঁর প্রেজেন্টেশনে জানান, ১ লাখ দক্ষ কর্মী পাঠানোর লক্ষ্য অর্জনে জাপানি ভাষা শেখার প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা তৈরিতে সরকারি ও বেসরকারি উভয় পক্ষই যৌথভাবে কাজ করছে।

দক্ষতা সবচেয়ে জরুরি: জাপান রাষ্ট্রদূতের বার্তা

জাপানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. দাউদ আলী অনলাইনে যুক্ত হয়ে বলেন, “সবাই মিলে কাজ করছি, যাতে জাপানে বেশি সংখ্যক কর্মী ও শিক্ষার্থী আসতে পারেন। গত ২ মাসে ২২টি অর্গানাইজেশন, ১০০টিরও বেশি জাপানি কোম্পানি কর্মী নিয়োগ দিয়েছে।” তিনি জোর দিয়ে বলেন, জাপান দক্ষ কর্মী চায়, তাই দ্রুত লোক পাঠানোর চেয়ে মানসম্পন্ন ও দক্ষ লোক পাঠানোই জরুরি।

এই বাস্তবতা আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জাপানের মতো উন্নত দেশে কাজের সুযোগ পেতে শুধুমাত্র আগ্রহ থাকলেই হবে না, প্রয়োজন উচ্চমানের দক্ষতা এবং জাপানি ভাষায় পারদর্শিতা। এটি এমন একটি ক্ষেত্র, যেখানে High-Salary Skills যেমন আইটি, টেকনিক্যাল নলেজ আপনাকে অন্যদের চেয়ে এগিয়ে রাখবে। আর এই দক্ষতা অর্জনের জন্য প্রয়োজন সঠিক প্রশিক্ষণ। অনেক ক্ষেত্রে এই ধরনের প্রশিক্ষণের জন্য Online Certification Fees পরিশোধ করতে হয়, যা আপনার ভবিষ্যৎ আয়ের জন্য একটি দারুণ বিনিয়োগ।

সরকারের বিশেষ ফোকাস: গঠিত হয়েছে ‘জাপান সেল’

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী সেমিনারে বলেন, “প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশে আমরা এখানে বিশেষ ফোকাস দিচ্ছি। জাপানে একটি বিশেষ ‘জাপান সেল’ গঠন করা হয়েছে। জাপান একটি বিশেষ জায়গা, আমাদের সামনে সুযোগ ও সম্ভাবনা আছে। সরকারের পক্ষ থেকে কীভাবে সাহায্য করা যায়, আমরা তা করছি।” বিডিজবসের প্রধান নির্বাহী ফাহিম মাশরুরও মনে করেন, সঠিক নীতিমালা গ্রহণ করতে পারলে বাংলাদেশ থেকে বছরে চার-পাঁচ লাখ জনশক্তি বিদেশে পাঠানো সম্ভব।

রেমিট্যান্সে বড় অবদান রাখছে শিক্ষার্থীরা

সেমিনারে প্রদত্ত তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে জাপানে ৩১ হাজার ৫৩৬ জন বাংলাদেশি অবস্থান করছেন, যার প্রায় অর্ধেকই শিক্ষার্থী। এই শিক্ষার্থীরা বছরে প্রায় ৯০০ কোটি টাকা রেমিট্যান্সের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখছেন। এটি প্রমাণ করে যে, বিদেশে শিক্ষাগ্রহণের পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা দেশের অর্থনীতিতে কতটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। সঠিক Career Counseling Services এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের জন্য সঠিক পথ বেছে নেওয়া সম্ভব, যা তাদের আর্থিক ভবিষ্যৎকে আরও সুরক্ষিত করতে পারে।

সঠিক নীতি ও প্রশিক্ষণে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ

বাংলাদেশ থেকে জাপানে দক্ষ কর্মী প্রেরণের এই পরিকল্পনা আমাদের দেশের জন্য একটি ইতিবাচক বার্তা। এটি কেবল বেকারত্ব কমাবে না, বরং বৈদেশিক রেমিট্যান্স বৃদ্ধিতেও বড় ভূমিকা রাখবে। তবে এই সুযোগ পুরোপুরি কাজে লাগাতে হলে সরকারি এবং বেসরকারি উভয় খাতকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে, বিশেষ করে জাপানি ভাষা ও কারিগরি প্রশিক্ষণে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। সঠিক প্রশিক্ষণ এবং নীতির মাধ্যমে এই লক্ষ্য অর্জন সম্ভব, যা দেশের তরুণদের জন্য এক উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দ্বার খুলে দেবে।

শিক্ষা থেকে আরওযুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষা: কেন প্রত্যাখ্যাত হচ্ছে এফ-১ ভিসা, জেনে নিন কারণ ও সমাধান

2 thoughts on “জাপানে উচ্চশিক্ষা ও কর্মসংস্থান: ৩ বছরে ৪৩ হাজার শিক্ষার্থী পাঠানোর পরিকল্পনা”

Leave a Comment