নটর ডেম কলেজ এইচএসসি ফলাফল ২০২৫: বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) প্রকাশিত হয়েছে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল। জাতীয় গড় পাসের হার কমলেও, ঈর্ষণীয় সাফল্য ধরে রেখেছে রাজধানীর নটর ডেম কলেজ। এ বছর প্রতিষ্ঠানটি থেকে ৯৯.৬০ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছেন এবং জিপিএ-৫ পেয়েছেন মোট ২৪৫৪ জন। জাতীয় গড় পাসের হার, নটর ডেম কলেজ এইচএসসি ফলাফল ২০২৫ ও বিস্তারিত বিশ্লেষণসহ বিস্তারিত জেনে নিন।
নটর ডেম কলেজ এইচএসসি ফলাফল ২০২৫ | জিপিএ-৫ ২৪৫৪
আজ, বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) সকালে প্রকাশিত হলো ২০২৫ সালের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল। দেশের শিক্ষাঙ্গনে এই দিনটি বরাবরই উত্তেজনা ও উচ্ছ্বাসে ভরা থাকে। তবে এবারের ফলাফল নিয়ে কিছুটা উদ্বেগ দেখা গেছে। ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ড মিলিয়ে গড় পাসের হার দাঁড়িয়েছে মাত্র ৫৮ দশমিক ৮৩ শতাংশ। গত বছরের তুলনায় এবার পাসের হার ও জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা—উভয়ই কমেছে।
এই জাতীয় হতাশার মাঝেও উজ্জ্বল ব্যতিক্রম হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করেছে দেশের অন্যতম সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, নটর ডেম কলেজ (Notre Dame College)। বরাবরকার মতো এবারও তারা ধরে রেখেছে ঈর্ষণীয় সাফল্যের ধারা।
এই আটক্যালে যা জানবেন
- নটর ডেম কলেজের চূড়ান্ত ফলাফলের পরিসংখ্যান ও জাতীয় গড়ের তুলনা।
- বিভাগভিত্তিক জিপিএ-৫ প্রাপ্তির সংখ্যা ও শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা।
- এই সাফল্যের পেছনে কলেজ কর্তৃপক্ষের প্রস্তুতি ও কৌশল।
নটর ডেম কলেজের সাফল্যের চমক: ৯৯.৬০% পাস ও রেকর্ড জিপিএ-৫
জাতীয় পর্যায়ে পাসের হার কমলেও, নটর ডেম কলেজের ফলাফল রীতিমতো চমকপ্রদ। প্রতিষ্ঠানটির সাফল্যের মূল পরিসংখ্যান নিচে তুলে ধরা হলো:
| পরীক্ষার তথ্য | সংখ্যা | হার/বিশ্লেষণ |
| মোট পরীক্ষার্থী | ৩,২৫১ জন | – |
| পরীক্ষায় অংশগ্রহণ | ৩,২৩৯ জন | – |
| মোট পাস | ৩,২২৬ জন | – |
| পাসের হার | ৯৯.৬০% | দেশের গড়ের চেয়ে অনেক বেশি |
| অকৃতকার্য শিক্ষার্থী | ২৫ জন | – |
| জিপিএ-৫ প্রাপ্তি | ২,৪৫৪ জন | মোট পরীক্ষার্থীর প্রায় ৭৬% |
এই ডেটা স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে, প্রতিকূল সময়েও মানসম্পন্ন শিক্ষা এবং কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে অসাধারণ ফলাফল অর্জন করা সম্ভব।
বিভাগভিত্তিক জিপিএ-৫ প্রাপ্তির চিত্র
জিপিএ-৫ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে নটর ডেম কলেজে বিজ্ঞান বিভাগ বরাবরের মতোই এগিয়ে। তবে মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগেও শিক্ষার্থীদের সাফল্য উল্লেখযোগ্য:
- বিজ্ঞান বিভাগ: ১,৯৬৮ জন
- ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ: ৩৭৮ জন
- মানবিক বিভাগ: ১০৮ জন
জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের মাঝে উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো। মানবিক বিভাগ থেকে এ+ পাওয়া মুয়াজ আল-আমিন প্রথম আলোকে বলেন, “আমি আমার ফলাফলে খুবই খুশি। আমার মা-বাবা দুজনেই আইনজীবী। আমিও তাঁদের মতো আইন নিয়েই পড়তে চাই।”
সাফল্যের পেছনের মূল কারণ: অধ্যক্ষ ও শিক্ষকদের বক্তব্য
কীভাবে এই ধারাবাহিক সাফল্য অর্জন সম্ভব হয়? এর উত্তর দিলেন নটর ডেম কলেজের অধ্যক্ষ ফাদার হেমন্ত পিউস রোজারিও। তিনি এই সাফল্যের নেপথ্যের কথা তুলে ধরেছেন:
“আমাদের ছাত্ররা বরাবরই ভালো ফলাফল করে। ক্লাসরুমে আমরা তাদের পুরো সিলেবাসটা শেষ করাই। ওদের সপ্তাহে দুটো করে কুইজ হয়। এই কুইজের জন্য তারা সারা বছর পড়ালেখার মধ্যেই থাকে। অভিভাবকেরাও আমাদের অনেক সহোযোগিতা করেন।”
অধ্যক্ষের কথায় স্পষ্ট, পুরো সিলেবাস শেষ করা, নিয়মিত কুইজ ও অভিভাবকদের সহযোগিতা—এই ত্রিফলা কৌশলেই আসে এই ঈর্ষণীয় সাফল্য।
ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের প্রভাষক ফারজানা হোসেন ক্যারিয়ার সচেতনতার উপর জোর দিলেন:
“আমরা আমাদের ছাত্রদের পড়াশোনা নিয়ে সব সময়ই সচেতন। সামনের দিনগুলোয় তাদের ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় ধাপ ভর্তি পরীক্ষার মুখোমুখি হবে। সেখানেও যেন তারা সফল হতে পারে, সে জন্যই এই প্রচেষ্টা।”
শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস
ফলাফল প্রকাশের পর কলেজ প্রাঙ্গণে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পরার মতো। বোন মুন্নি সাহাকে নিয়ে আসা সান সাহা বলেন, “আমি পরিশ্রম করেছি, এই ফলাফল না হলে খারাপ লাগত। বলতে পারেন, এটা আমার প্রত্যাশিত ফলাফল। খুবই ভালো লাগছে আজ।” তাঁর বোন মুন্নি সাহা আশা প্রকাশ করেন, তাঁর ভাই এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাবে।
জাতীয় পাসের হারের বিশ্লেষণ ও বিদেশের কেন্দ্রে ফল
নটর ডেম কলেজের এমন সাফল্যের বিপরীতে, জাতীয় গড় পাসের হার কমায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে এবার বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে। সামগ্রিকভাবে ৯টি বোর্ড, মাদ্রাসা ও কারিগরি বোর্ড মিলিয়ে পাসের হার ৫৮.৮৩%, যা একটি বড় উদ্বেগের বিষয়।
তবে দেশের বাইরের চিত্রটি তুলনামূলকভাবে ভালো। এ বছর দেশের বাইরে আটটি কেন্দ্রে মোট ২৯১ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেন। তাঁদের মধ্যে পাস করেছেন ২৭৯ জন। অর্থাৎ গড় পাসের হার ৯৫.৮৮ শতাংশ। বিদেশের দুটি কেন্দ্রে শতভাগ পরীক্ষার্থী পাস করেছেন।
২০২৫ সালের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফলে নটর ডেম কলেজের ৯৯.৬০ শতাংশ পাস এবং ২৪৫৪ জন জিপিএ-৫ প্রাপ্তি নিঃসন্দেহে একটি বিশাল অর্জন। এটি কেবল প্রতিষ্ঠানের জন্যই নয়, পুরো দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য একটি অনুপ্রেরণা। এটি প্রমাণ করে, যদি সঠিক পদ্ধতি, নিয়মিত মূল্যায়ন এবং কার্যকর শিক্ষাদান নিশ্চিত করা যায়, তবে শিক্ষার্থীরা যেকোনো কঠিন পরিস্থিতিতেও প্রত্যাশিত ফলাফল অর্জন করতে পারে। তবে, জাতীয় পর্যায়ে পাসের হার ও জিপিএ-৫ প্রাপ্তির সংখ্যা কমার বিষয়টি নীতিনির্ধারকদের জন্য গভীর চিন্তার অবকাশ এনে দিয়েছে।
সম্পর্কিত আর্টিকেল: আয়ারল্যান্ড সরকারি স্কলারশিপ ২০২৬: বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য সম্পূর্ণ রোডম্যাপ



