মাদ্রাসা শিক্ষকদের জন্য ১২ জরুরি নির্দেশনা: যা না মানলে ব্যবস্থা

মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের অধীনে থাকা সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারী এবং প্রতিষ্ঠানপ্রধানদের জন্য সম্প্রতি এক জরুরি নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। এই আদেশে বলা হয়েছে, এখন থেকে কোনো কাজ বা প্রয়োজনে অধিদপ্তরে আসতে হলে অবশ্যই যথাযথ ছুটি বা অনুমতিপত্র সঙ্গে আনতে হবে। অন্যথায়, তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মো. আবদুল মান্নান স্বাক্ষরিত এই প্রজ্ঞাপনটি ইতোমধ্যে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

কেন এই জরুরি নির্দেশনা: কারণ ও উদ্দেশ্য

অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, মাদ্রাসাগুলোর প্রতিষ্ঠানপ্রধান এবং শিক্ষক-কর্মচারীরা প্রায়শই ব্যক্তিগত বা প্রাতিষ্ঠানিক বিভিন্ন কাজের জন্য সরাসরি অধিদপ্তরে চলে আসেন। এর ফলে দুটি প্রধান সমস্যা তৈরি হয়:

  • শিক্ষাকার্যক্রম ব্যাহত: শিক্ষকরা যখন তাদের প্রতিষ্ঠানে না থেকে ব্যক্তিগত কাজে অধিদপ্তরে আসেন, তখন শিক্ষার্থীদের পাঠদান ব্যাহত হয়।
  • অধিদপ্তরের কাজে বিঘ্ন: অতিরিক্ত শিক্ষক-কর্মচারীর ভিড় অধিদপ্তরের স্বাভাবিক প্রশাসনিক কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করে।

এই নির্দেশনা জারির মূল উদ্দেশ্য হলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শৃঙ্খলার পরিবেশ ফিরিয়ে আনা এবং প্রশাসনিক কার্যক্রমকে আরও সুশৃঙ্খল ও গতিশীল করা।

অধিদপ্তরে যাওয়ার নতুন নিয়ম: ছুটি বা অনুমতি বাধ্যতামূলক

প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, এখন থেকে কোনো শিক্ষক বা কর্মচারী অধিদপ্তরে এলে আবশ্যিকভাবে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানপ্রধানের কাছ থেকে ছুটি বা অনুমতিপত্র সঙ্গে আনতে হবে। একই নিয়ম প্রতিষ্ঠানপ্রধানদের জন্যও প্রযোজ্য। অধিদপ্তর বা শাখা কর্মকর্তারা এই অনুমতিপত্র আছে কিনা তা নিশ্চিত করবেন। যদি কোনো শিক্ষক বা প্রতিষ্ঠানপ্রধান এই নিয়ম না মানেন, তবে তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই পদক্ষেপের মাধ্যমে অধিদপ্তর চাইছে একটি সুশৃঙ্খল প্রক্রিয়া চালু করতে, যেখানে অপ্রয়োজনীয় ভিড় এড়ানো সম্ভব হবে।

যে ১২টি কাজ এখন থেকে অনলাইনে বা ডকেটে পাঠানো যাবে

শিক্ষক ও প্রতিষ্ঠানপ্রধানদের অধিদপ্তরে সরাসরি আসার প্রবণতা কমাতে, কিছু নির্দিষ্ট কাজ অনলাইনে বা সরাসরি ডকেটের মাধ্যমে পাঠানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এই ১২টি কাজের মধ্যে রয়েছে:

  1. এমপিওভুক্তকরণ: শিক্ষকদের বেতন-ভাতাদি সরকারি কোষাগার থেকে পাওয়ার প্রক্রিয়া।
  2. এমপিওভুক্ত মাদ্রাসায় বিশেষ বরাদ্দ প্রদান: বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের জন্য আর্থিক সহায়তা।
  3. উচ্চতর স্কেল প্রদান: নির্দিষ্ট সময় পর শিক্ষকদের বেতন স্কেল বৃদ্ধি।
  4. পদোন্নতি: যোগ্য শিক্ষকদের পদোন্নতির আবেদন।
  5. ডিজি মহোদয়ের প্রতিনিধি মনোনয়ন: বিভিন্ন কমিটির জন্য প্রতিনিধি নির্বাচন।
  6. এমপিও শিটে নাম, পদবি ও বিষয় সংশোধন: এমপিও শিটে থাকা ভুল তথ্য সংশোধন।
  7. জন্ম-তারিখ সংশোধন: জন্মতারিখের ত্রুটি ঠিক করা।
  8. বকেয়া প্রদান: বকেয়া বেতন-ভাতা সংক্রান্ত কাজ।
  9. প্রশিক্ষণে শিক্ষক-কর্মকর্তা মনোনয়ন: বিভিন্ন পেশাদার প্রশিক্ষণ প্রোগ্রামের জন্য শিক্ষক নির্বাচন।
  10. ইনডেক্স প্রদান: নতুন শিক্ষকদের ইনডেক্স নম্বর প্রদান।
  11. ইনডেক্স কাটা: কোনো শিক্ষকের পদত্যাগ বা অবসরের পর ইনডেক্স বাতিল করা।
  12. অন্যান্য কাজ: বিভিন্ন প্রশাসনিক ও জরুরি বিষয়।

বিশেষ করে শিক্ষকতার মতো একটি পেশায় Professional Training এবং Online Certification Fees এর বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই ধরনের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শিক্ষকরা নিজেদের দক্ষতা বাড়াতে পারেন, যা শিক্ষা কার্যক্রমের মান উন্নয়নে সরাসরি প্রভাব ফেলে। মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষিকাদের জন্য এই ধরনের প্রশিক্ষণ গ্রহণ একটি অপরিহার্য বিষয়।

নির্দেশনা না মানলে যে ব্যবস্থা নেওয়া হবে

এই নির্দেশনা না মানলে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক বা প্রতিষ্ঠানপ্রধানের বিরুদ্ধে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (মাদ্রাসা) জনবলকাঠামো ও এমপিও নীতিমালা-২০১৮ (২৩ নভেম্বর ২০২০ পর্যন্ত সংশোধিত/সর্বশেষ পরিমার্জিত) এর ১৮.১ (খ) এবং (গ) অনুচ্ছেদ অনুসারে কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের নির্দেশনা মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এটি একটি অত্যন্ত জরুরি বিষয় হিসেবে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে, যা নির্দেশনার গুরুত্ব তুলে ধরে।

উপসংহার: শৃঙ্খলার মাধ্যমে কাজের গতি বৃদ্ধি

মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের এই জরুরি নির্দেশনাটি প্রশাসনিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার একটি সময়োপযোগী উদ্যোগ। এটি একদিকে যেমন শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটি সুষ্ঠু শিক্ষণ-শিখন পরিবেশ নিশ্চিত করবে, তেমনি অধিদপ্তরের কাজকেও আরও দ্রুত ও কার্যকরী করে তুলবে। এর ফলে দেশের মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থায় একটি ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে বলে আশা করা যায়। বিস্তারিত তথ্যের জন্য মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট https://dme.gov.bd/ ভিজিট করা যেতে পারে।

শিক্ষা থেকে আরওএকাদশ শ্রেণিতে ভর্তি: লক্ষাধিক শিক্ষার্থীর আবেদন না করার কারণ কী?

1 thought on “মাদ্রাসা শিক্ষকদের জন্য ১২ জরুরি নির্দেশনা: যা না মানলে ব্যবস্থা”

Leave a Comment